Thursday, June 18, 2020

Land Slide ভূমিধস

Land Slide 

যে সমস্ত প্রাকৃতিক ঘটনা মানুষ ও পরিবেশের ক্ষতি করে তাকে প্রাকৃতিক বিপর্যয় বলে। এর মধ্যে ধস অন্যতম ।এটি সূত্রপাত হয় বিভিন্ন প্রকার প্রাকৃতিক ঘটনা ও মানুষের কার্যাবলীকে কেন্দ্র করে ।সাধারণভাবে পাহাড়ের ঢাল বরাবর মাধ্যাকর্ষণ শক্তির টানে পাথরের চাঁই, মাটি এবং অন্যান্য আলগা পদার্থের হঠাৎ নেমে আসা বা ধসে পড়ার ঘটনাকে ধস বলে । সাধারণত বর্ষাকালে পাহাড়ে ধস নামে ।তবে ভূমিকম্প হলে বা আগ্নেয়গিরি থেকে অগ্ন্যুৎপাতের সময়েও ধস নামতে পারে । ধস নামলে মানুষ ও পরিবেশের প্রচুর ক্ষতি হয়। তাই এটি মানুষের কাছে বিশেষ সমস্যা ।যেমন বর্ষাকালে দার্জিলিং ও তার আশেপাশের পাহাড়ি অঞ্চলে প্রায় 2000 প্রকারের ভূমিধস দেখা যায় ।

ধস  দ্রুত ও ধির এই দুই প্রক্রিয়ায় সংগঠিত হতে পারে ।তবে অনেক সময় এর জন্য বেশ খানিকটা সময়েরও দরকার হয় । তা শুধু মাত্র কয়েকটা দিন সপ্তাহ নয়, কয়েক বছর ধরেও আস্তে আস্তে ঘটতে পারে। আর যেসব জায়গায় আবহাওয়া পরিবর্তন হয় ঘনঘন সেখানেই এরকম ধসের ঘটনা চোখে পড়ে বেশি।

ধস সৃষ্টি কারণ :

সমস্ত রকম ধসের সঙ্গে প্রাকৃতিক কারণ ও মনুষ্য জনিত এই দুই কারণ খুব গভীরভাবে জড়িত ।

প্রাকৃতিক কারণ

বৃষ্টিপাত

ধস সৃস্টির প্রধান কারণ হিসেবে বৃষ্টিপাতকেই দায়ী করা হয়। পার্বত্য অঞ্চলে অত্যাধিক বৃষ্টিপাতের কারণে মাটি, পাথর জলে ভিজে আলগা ও ভারি হয়ে যায় ।তখন মাধ্যাকর্ষণ শক্তি টানে ধ্বস নামে। এই কারণেই সিমলা সহ সমগ্র উত্তরাঞ্চলে ধস নামে।

অভিকর্ষজ বল

প্রত্যেক বস্তুরই একটি সাধারণ ধর্ম হল মহাকর্ষ ।পৃথিবীতে যেকোনো দুটি বস্তু একে অপরের টানে অর্থাৎ নিউটনের সূত্র অনুযায়ী উপরে থাকা কোন বস্তুকে পৃথিবী নিজের দিকে টেনে রাখে যা অভিকর্ষ সূত্র নামে পরিচিত। আর এই কারনেই কোন বস্তু যখন পৃথিবীর দিকে আসে তখন তার গতি বৃদ্ধি পায় অভিকর্ষজ ত্বরণ নামে পরিচিত ।একে ইংরেজি g দিয়ে বোঝানো হয় ।ধস এর ক্ষেত্রে এই g এর গুরুত্ব বেশি।

পাথর আলগা হওয়া

পার্বত্য অঞ্চলে বহুদিন ধরে জল, বাতাস ,গাছের শিকড়ের চাপ, বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থের বিক্রিয়া প্রভৃতির কারণে পাথর ফেটে যায়। দুর্বল হয়ে পড়ে । ফলে ঐ দুর্বল পাথরের স্তুপ ধস হয়ে নিচের দিকে নামতে থাকে।

ভূমিক্ষয়

ভারতের পার্বত্য অঞ্চলে ভূমিক্ষয় তীব্র ভাবে ঘটছে ।এর হার 1mm/ প্রতি বছর অর্থাৎ সমস্ত হিমালয়কে সমতলভূমি ভাবলে প্রতিবছর 1 mm মৃত্তিকা স্তরের ক্ষয় হচ্ছে ।এই ক্ষয়ের হার বর্তমানে প্রায় 5 গুণ বেশি।

ঢালের নতি

ধসের প্রাবল্য নির্ভর করে ঢাল বরাবর নতির উপর । ঢালের নতি কম হওয়ার কারণে ঢাল বরাবর কাজ করে বলের উপাংশের পরিমাণও কমে যায় ।আবার ঢালের নতি বেশি হওয়ার কারণে তা বেড়ে যায় ।ঢালের উপরের দিকে কোনো কারণে ওজনের পরিমাণ বেড়ে গেলে ধসের সম্ভাবনা বহুগুণ বেড়ে যায়।

ভূকম্পন

1950 সালে অরুণাচল প্রদেশের বড় ধরনের ভূকম্পন ঘটেছিল। এর ফলে ধসের মতো বিপর্যয় ঘটেছিল ।পাহাড়ি অঞ্চলে ভূমিকম্পের সঙ্গে ধসের একটা সম্পর্ক আছে। ভূকম্প তরঙ্গগুলো রেগোলিথের মধ্যে দিয়ে যায় । স্বাভাবিকভাবেই এই ধরণের কম্পন গুলো ঢাল  বরাবর গরিয়ে যেতে  সাহায্য করে। শিলাস্তরের টুকরোগুলো নানান আকার আকৃতির হয় ।এর ফলেও ধসের কাজ  সহজতর হয়। 

এছাড়া অগ্ন্যুৎপাতের ফলেও ভূমিধস ঘটতে পারে।

মনুষ্য সৃষ্ট কারণ

ধস এর ক্ষেত্রে প্রাকৃতিক কারণ এর সঙ্গে মনুষ্যসৃষ্ট কারণগুলো সমানভাবে দায়ী ।এই গুলি হল

অরণ্য নিধন

অরণ্য নিধন করলে তখন গাছপালার আবরন সেই ভূমির উপর থাকে না ।এই অবস্থায় বৃষ্টির জল দিনের পর দিন মাটির মধ্যে অনবরত ঢুকে যায়।  মাটির দুর্বল হয়ে পড়ে খসে পড়ে ।ধ্বস নামে।

অপরিকল্পিত চিন্তাভাবনা

দুর্বল ও খাড়াই পাহাড়ি ঢালে নিয়ম না মেনে বাড়িঘর রাস্তাঘাট বানালে দুর্বল মাটিতে খুব গভীরে শিকড় প্রবেশ করাতে পারে এমন গাছ পুঁতলে শহরের জঞ্জাল অনেকদিন ধরে পাহাড়ের ঢালে জমা করে করা হলে ধ্বস নামে ।দার্জিলিং গ্যাংটক এর আশেপাশে এ কারণে বহুবার ধ্বস হয়েছে।

উপযুক্ত কারণ গুলি ছাড়াও জল জমা, মানুষের বিভিন্ন কার্যাবলী যেমন বাঁধ নির্মাণ মৃত্তিকা ও খনি খনন প্রভৃতি কারণেও ধস সৃষ্টি হতে পারে।

ধ্বস জনিত বিভিন্ন সমস্যা

ধস ও পরিবেশগত সমস্যা

যদিও ধস প্রাকৃতিক ঘটনা তথাপি এটি পরিবেশ ও মানুষের কাছে ইদানিং বেশ সমস্যা হয়ে দেখা দিচ্ছে ।এর ফলে একদিকে যেমন বসতবাড়ি গাছপালা রাস্তাঘাট প্রভৃতির মতো সম্পত্তির ক্ষতি হয়।

ধস জনিতো বিভিন্ন সমস্যা গুলি হল

i)ধ্বস নামলে গাছপালা ভেঙে পড়ে। ফলে বনভূমি নষ্ট হয়।

ii)ধসে যাওয়া মাটি সাধারণত বালি, কাঁকর পাথরে ভর্তি থাকে ।ফলে মাটির গুণাগুণ নষ্ট হয় ।আর যেখান থেকে ধস নামে সেখানে পাহাড়ের ঢালে কঠিন পাথর বা শিলাস্তর বেরিয়ে পড়ে। তাই ধসের ফলে সেখান থেকে নামলে আলগা পাথরে মাটি সেখানে নেমে জমা হল সেই জায়গায় মাটি ক্ষতি হয়।

iii)ধস নামার জন্য পাহাড়ের ঢাল নষ্ট হয় অর্থাৎ পাহাড়ি ঢাল আরো খাড়াই হয়। দুর্বল হয়। ওই নষ্ট হওয়া ঢালের উপর বাড়িঘর রাস্তাঘাট তৈরি করা যায় না।

iv)পাহাড়ি অঞ্চলের ধস অনেক সময় নামতে নামতে নদীর বুকে এসে জমা হয় এবং নদীর পথ আটকে যায়। তখন ওই অস্বাভাবিক বাঁধের পিছনে জল জমতে থাকে ।বর্ষার জলের চাপে ওই বাঁধ ভেঙে গেলে প্রবল জ্লের তোড়ে নদীর দু'পাশে বন্যা হয় ।এইভাবে 1968 সালে তিস্তা নদীর বন্যায় জলপাইগুড়ি ভেসে গিয়েছিল।

v)ধস নামার অন্য এক পরিনতি  হলো ভূমিক্ষয় বৃদ্ধি পায়।

ধস মানুষের সমস্যা

i)ধসের ফলে বাড়িঘর ভেঙে যায়। এমনকি বড় আয়তনের ধস নামলে  একটা গ্রামও ধ্বংস হতে পারে ।

ii)ধ্বস নামলে রাস্তাঘাট নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায় ।

iii)চা বাগান কমলালেবু আপেল প্রভৃতি চাষে ক্ষতি হয়।

iv)ধ্বস নামার ফলে চাষাবাদের ব্যাপক ক্ষতি হয় লক্ষ লক্ষ টাকার ধান জোয়ার বাজরা আলু শাক সবজি নষ্ট হয়।

v)ধ্বস নামার ফলে রাস্তাঘাট ক্ষতি হওয়ার দরুন পাহাড়ি অঞ্চলে পর্যটন শিল্পের ব্যাপক ক্ষতি হয়।

vi)ধসের ফলে মানুষের প্রাণহানি ঘটে গৃহপালিত জীব জন্তু মারা যায়।

ধস নিয়ন্ত্রণ এর উপায়

ধস একটি বৃহৎ প্রাকৃতিক বিপর্যয় এই প্রাকৃতিক বিপর্যয় নিয়ন্ত্রনের উপায় গুলি হল

i)যেখানে সেখানে বাড়িঘর রাস্তাঘাট তৈরি না করা।

ii)বাড়িঘর রাস্তাঘাট সেতু প্রভৃতি নির্মাণ করার আগে ওই এলাকার মাটি পাথর ইত্যাদি কতটা চাপ সহ্য করতে পারে তার ভূ-তাত্ত্বিক পরীক্ষা করা উচিত।

iii)পাহাড়ের ঢালে যেখানে সেখানে ময়লা আবর্জনা ফেলা বন্ধ করা দরকার।

iv)জমির সঠিক ব্যবহারের জন্য পরিকল্পনা করা প্রয়োজন এবং সমস্ত রকম নির্মাণ পরিকল্পনামাফিক হওয়া প্রয়োজন।

v)ধস নামলে লোকজনদের প্রাণরক্ষা করার জন্য নিরাপদ আশ্রয় গড়ে তোলা প্রয়োজন।

vi)ধস প্রবন এলাকায়  মাটির মধ্যে যাতে জল জমতে না পারে এবং উদ্বৃত্ত জমা জল যাতে সহজে বেরিয়ে আসে তার জন্য বিভিন্ন কারিগরি পদ্ধতি অবলম্বন করা দরকার।

vii)পাহাড়ের দুর্বল ঢাল যাতে ধসে না পড়ে সে জন্য বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অনুসরণ করে পাঁচিল গেঁথে দেওয়া দরকার।

viii)পাহাড়ি ঢালে নতুন করে গাছ লাগানো দরকার এবং বেআইনি গাছ কাটা বন্ধ করা প্রয়োজন।

সবশেষে জনমত সংগ্রহ করে ধসের বিপদ সম্বন্ধে সজাগ ও সচেতন মতামত গড়ে ওঠা জরুরি।


কিছু সাম্প্রতিক ঘটনা

No comments:

Post a Comment

শিক্ষক দিবস

শিক্ষক দিবস Teacher's Day আজকে শিক্ষক দিবস। আজকেই আমাদের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণানের জন্মদিন। রাষ্ট্রপতি হলেও তিনি একজন ...