Tuesday, June 30, 2020

বয়কট চায়না (Boycott China)

Boycott China

সম্প্রতি ভারত সরকার দ্বারা চীনের যে 59 টি অ্যাপ এর উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে তা বর্তমান পরিস্থিতিতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

এই  অ্যাপ গুলি যে মানুষের প্রাত্যহিক জীবনে ভীষণ ভাবে কাজে লাগে তা নয় তবে একথা ঠিক এর মধ্যে এমন কিছু অ্যাপস রয়েছে যা বর্তমান যুব সমাজকে একটি মুবি সমাজে অধঃপতন করেছে। এক্ষেত্রে আমরা টিক টক অ্যাপ এর কথা বলতে পারি ।

এর মধ্যে কিছু অ্যাপ আছে যে অ্যাপ গুলির অনেক বিকল্প আমরা গুগল প্লে স্টোরে পেয়ে যাব যাতে আমাদের ব্যক্তিগত তথ্য অনেক সুরক্ষিত থাকবে।


Thursday, June 18, 2020

Land Slide ভূমিধস

Land Slide 

যে সমস্ত প্রাকৃতিক ঘটনা মানুষ ও পরিবেশের ক্ষতি করে তাকে প্রাকৃতিক বিপর্যয় বলে। এর মধ্যে ধস অন্যতম ।এটি সূত্রপাত হয় বিভিন্ন প্রকার প্রাকৃতিক ঘটনা ও মানুষের কার্যাবলীকে কেন্দ্র করে ।সাধারণভাবে পাহাড়ের ঢাল বরাবর মাধ্যাকর্ষণ শক্তির টানে পাথরের চাঁই, মাটি এবং অন্যান্য আলগা পদার্থের হঠাৎ নেমে আসা বা ধসে পড়ার ঘটনাকে ধস বলে । সাধারণত বর্ষাকালে পাহাড়ে ধস নামে ।তবে ভূমিকম্প হলে বা আগ্নেয়গিরি থেকে অগ্ন্যুৎপাতের সময়েও ধস নামতে পারে । ধস নামলে মানুষ ও পরিবেশের প্রচুর ক্ষতি হয়। তাই এটি মানুষের কাছে বিশেষ সমস্যা ।যেমন বর্ষাকালে দার্জিলিং ও তার আশেপাশের পাহাড়ি অঞ্চলে প্রায় 2000 প্রকারের ভূমিধস দেখা যায় ।

ধস  দ্রুত ও ধির এই দুই প্রক্রিয়ায় সংগঠিত হতে পারে ।তবে অনেক সময় এর জন্য বেশ খানিকটা সময়েরও দরকার হয় । তা শুধু মাত্র কয়েকটা দিন সপ্তাহ নয়, কয়েক বছর ধরেও আস্তে আস্তে ঘটতে পারে। আর যেসব জায়গায় আবহাওয়া পরিবর্তন হয় ঘনঘন সেখানেই এরকম ধসের ঘটনা চোখে পড়ে বেশি।

ধস সৃষ্টি কারণ :

সমস্ত রকম ধসের সঙ্গে প্রাকৃতিক কারণ ও মনুষ্য জনিত এই দুই কারণ খুব গভীরভাবে জড়িত ।

প্রাকৃতিক কারণ

বৃষ্টিপাত

ধস সৃস্টির প্রধান কারণ হিসেবে বৃষ্টিপাতকেই দায়ী করা হয়। পার্বত্য অঞ্চলে অত্যাধিক বৃষ্টিপাতের কারণে মাটি, পাথর জলে ভিজে আলগা ও ভারি হয়ে যায় ।তখন মাধ্যাকর্ষণ শক্তি টানে ধ্বস নামে। এই কারণেই সিমলা সহ সমগ্র উত্তরাঞ্চলে ধস নামে।

অভিকর্ষজ বল

প্রত্যেক বস্তুরই একটি সাধারণ ধর্ম হল মহাকর্ষ ।পৃথিবীতে যেকোনো দুটি বস্তু একে অপরের টানে অর্থাৎ নিউটনের সূত্র অনুযায়ী উপরে থাকা কোন বস্তুকে পৃথিবী নিজের দিকে টেনে রাখে যা অভিকর্ষ সূত্র নামে পরিচিত। আর এই কারনেই কোন বস্তু যখন পৃথিবীর দিকে আসে তখন তার গতি বৃদ্ধি পায় অভিকর্ষজ ত্বরণ নামে পরিচিত ।একে ইংরেজি g দিয়ে বোঝানো হয় ।ধস এর ক্ষেত্রে এই g এর গুরুত্ব বেশি।

পাথর আলগা হওয়া

পার্বত্য অঞ্চলে বহুদিন ধরে জল, বাতাস ,গাছের শিকড়ের চাপ, বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থের বিক্রিয়া প্রভৃতির কারণে পাথর ফেটে যায়। দুর্বল হয়ে পড়ে । ফলে ঐ দুর্বল পাথরের স্তুপ ধস হয়ে নিচের দিকে নামতে থাকে।

ভূমিক্ষয়

ভারতের পার্বত্য অঞ্চলে ভূমিক্ষয় তীব্র ভাবে ঘটছে ।এর হার 1mm/ প্রতি বছর অর্থাৎ সমস্ত হিমালয়কে সমতলভূমি ভাবলে প্রতিবছর 1 mm মৃত্তিকা স্তরের ক্ষয় হচ্ছে ।এই ক্ষয়ের হার বর্তমানে প্রায় 5 গুণ বেশি।

ঢালের নতি

ধসের প্রাবল্য নির্ভর করে ঢাল বরাবর নতির উপর । ঢালের নতি কম হওয়ার কারণে ঢাল বরাবর কাজ করে বলের উপাংশের পরিমাণও কমে যায় ।আবার ঢালের নতি বেশি হওয়ার কারণে তা বেড়ে যায় ।ঢালের উপরের দিকে কোনো কারণে ওজনের পরিমাণ বেড়ে গেলে ধসের সম্ভাবনা বহুগুণ বেড়ে যায়।

ভূকম্পন

1950 সালে অরুণাচল প্রদেশের বড় ধরনের ভূকম্পন ঘটেছিল। এর ফলে ধসের মতো বিপর্যয় ঘটেছিল ।পাহাড়ি অঞ্চলে ভূমিকম্পের সঙ্গে ধসের একটা সম্পর্ক আছে। ভূকম্প তরঙ্গগুলো রেগোলিথের মধ্যে দিয়ে যায় । স্বাভাবিকভাবেই এই ধরণের কম্পন গুলো ঢাল  বরাবর গরিয়ে যেতে  সাহায্য করে। শিলাস্তরের টুকরোগুলো নানান আকার আকৃতির হয় ।এর ফলেও ধসের কাজ  সহজতর হয়। 

এছাড়া অগ্ন্যুৎপাতের ফলেও ভূমিধস ঘটতে পারে।

মনুষ্য সৃষ্ট কারণ

ধস এর ক্ষেত্রে প্রাকৃতিক কারণ এর সঙ্গে মনুষ্যসৃষ্ট কারণগুলো সমানভাবে দায়ী ।এই গুলি হল

অরণ্য নিধন

অরণ্য নিধন করলে তখন গাছপালার আবরন সেই ভূমির উপর থাকে না ।এই অবস্থায় বৃষ্টির জল দিনের পর দিন মাটির মধ্যে অনবরত ঢুকে যায়।  মাটির দুর্বল হয়ে পড়ে খসে পড়ে ।ধ্বস নামে।

অপরিকল্পিত চিন্তাভাবনা

দুর্বল ও খাড়াই পাহাড়ি ঢালে নিয়ম না মেনে বাড়িঘর রাস্তাঘাট বানালে দুর্বল মাটিতে খুব গভীরে শিকড় প্রবেশ করাতে পারে এমন গাছ পুঁতলে শহরের জঞ্জাল অনেকদিন ধরে পাহাড়ের ঢালে জমা করে করা হলে ধ্বস নামে ।দার্জিলিং গ্যাংটক এর আশেপাশে এ কারণে বহুবার ধ্বস হয়েছে।

উপযুক্ত কারণ গুলি ছাড়াও জল জমা, মানুষের বিভিন্ন কার্যাবলী যেমন বাঁধ নির্মাণ মৃত্তিকা ও খনি খনন প্রভৃতি কারণেও ধস সৃষ্টি হতে পারে।

ধ্বস জনিত বিভিন্ন সমস্যা

ধস ও পরিবেশগত সমস্যা

যদিও ধস প্রাকৃতিক ঘটনা তথাপি এটি পরিবেশ ও মানুষের কাছে ইদানিং বেশ সমস্যা হয়ে দেখা দিচ্ছে ।এর ফলে একদিকে যেমন বসতবাড়ি গাছপালা রাস্তাঘাট প্রভৃতির মতো সম্পত্তির ক্ষতি হয়।

ধস জনিতো বিভিন্ন সমস্যা গুলি হল

i)ধ্বস নামলে গাছপালা ভেঙে পড়ে। ফলে বনভূমি নষ্ট হয়।

ii)ধসে যাওয়া মাটি সাধারণত বালি, কাঁকর পাথরে ভর্তি থাকে ।ফলে মাটির গুণাগুণ নষ্ট হয় ।আর যেখান থেকে ধস নামে সেখানে পাহাড়ের ঢালে কঠিন পাথর বা শিলাস্তর বেরিয়ে পড়ে। তাই ধসের ফলে সেখান থেকে নামলে আলগা পাথরে মাটি সেখানে নেমে জমা হল সেই জায়গায় মাটি ক্ষতি হয়।

iii)ধস নামার জন্য পাহাড়ের ঢাল নষ্ট হয় অর্থাৎ পাহাড়ি ঢাল আরো খাড়াই হয়। দুর্বল হয়। ওই নষ্ট হওয়া ঢালের উপর বাড়িঘর রাস্তাঘাট তৈরি করা যায় না।

iv)পাহাড়ি অঞ্চলের ধস অনেক সময় নামতে নামতে নদীর বুকে এসে জমা হয় এবং নদীর পথ আটকে যায়। তখন ওই অস্বাভাবিক বাঁধের পিছনে জল জমতে থাকে ।বর্ষার জলের চাপে ওই বাঁধ ভেঙে গেলে প্রবল জ্লের তোড়ে নদীর দু'পাশে বন্যা হয় ।এইভাবে 1968 সালে তিস্তা নদীর বন্যায় জলপাইগুড়ি ভেসে গিয়েছিল।

v)ধস নামার অন্য এক পরিনতি  হলো ভূমিক্ষয় বৃদ্ধি পায়।

ধস মানুষের সমস্যা

i)ধসের ফলে বাড়িঘর ভেঙে যায়। এমনকি বড় আয়তনের ধস নামলে  একটা গ্রামও ধ্বংস হতে পারে ।

ii)ধ্বস নামলে রাস্তাঘাট নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায় ।

iii)চা বাগান কমলালেবু আপেল প্রভৃতি চাষে ক্ষতি হয়।

iv)ধ্বস নামার ফলে চাষাবাদের ব্যাপক ক্ষতি হয় লক্ষ লক্ষ টাকার ধান জোয়ার বাজরা আলু শাক সবজি নষ্ট হয়।

v)ধ্বস নামার ফলে রাস্তাঘাট ক্ষতি হওয়ার দরুন পাহাড়ি অঞ্চলে পর্যটন শিল্পের ব্যাপক ক্ষতি হয়।

vi)ধসের ফলে মানুষের প্রাণহানি ঘটে গৃহপালিত জীব জন্তু মারা যায়।

ধস নিয়ন্ত্রণ এর উপায়

ধস একটি বৃহৎ প্রাকৃতিক বিপর্যয় এই প্রাকৃতিক বিপর্যয় নিয়ন্ত্রনের উপায় গুলি হল

i)যেখানে সেখানে বাড়িঘর রাস্তাঘাট তৈরি না করা।

ii)বাড়িঘর রাস্তাঘাট সেতু প্রভৃতি নির্মাণ করার আগে ওই এলাকার মাটি পাথর ইত্যাদি কতটা চাপ সহ্য করতে পারে তার ভূ-তাত্ত্বিক পরীক্ষা করা উচিত।

iii)পাহাড়ের ঢালে যেখানে সেখানে ময়লা আবর্জনা ফেলা বন্ধ করা দরকার।

iv)জমির সঠিক ব্যবহারের জন্য পরিকল্পনা করা প্রয়োজন এবং সমস্ত রকম নির্মাণ পরিকল্পনামাফিক হওয়া প্রয়োজন।

v)ধস নামলে লোকজনদের প্রাণরক্ষা করার জন্য নিরাপদ আশ্রয় গড়ে তোলা প্রয়োজন।

vi)ধস প্রবন এলাকায়  মাটির মধ্যে যাতে জল জমতে না পারে এবং উদ্বৃত্ত জমা জল যাতে সহজে বেরিয়ে আসে তার জন্য বিভিন্ন কারিগরি পদ্ধতি অবলম্বন করা দরকার।

vii)পাহাড়ের দুর্বল ঢাল যাতে ধসে না পড়ে সে জন্য বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অনুসরণ করে পাঁচিল গেঁথে দেওয়া দরকার।

viii)পাহাড়ি ঢালে নতুন করে গাছ লাগানো দরকার এবং বেআইনি গাছ কাটা বন্ধ করা প্রয়োজন।

সবশেষে জনমত সংগ্রহ করে ধসের বিপদ সম্বন্ধে সজাগ ও সচেতন মতামত গড়ে ওঠা জরুরি।


কিছু সাম্প্রতিক ঘটনা

Sunday, June 14, 2020

ডেভিসের ক্ষয়চক্র মতবাদ (Cycle of Erosion)

ডেভিসের ক্ষয়চক্র মতবাদ

(Cycle of Erosion)

Prepared by:Rajesh Chatterjee

কাদের জন্য প্রয়োজনীয়: বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষা ।

ওয়েস্ট বেঙ্গল বোর্ডের একাদশ শ্রেণি, ডিগ্রি কোর্সের পাস ও অনার্স এবং পোস্ট গ‍্যাজুয়েট ছাত্র ছাত্রী ।


(আজকের আমার এই লেখার মাধ্যমে ডেভিসের ক্ষয়চক্র মতবাদ কাকে বলে এর পর্যায় গুলো কি কি এবং এই ক্ষয়চক্র সংগঠিত হতে গেলে কি কি অবস্থা প্রয়োজন সমালোচনা সহ আলোচনা করব ।)


ভূমিরূপের বিবর্তন সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে উইলিয়াম মরিস ডেভিস সর্বপ্রথম 1899 সালে প্রথম ক্ষয়চক্র ধারণার প্রবর্তন করেন তার মতে কোন একটি নির্দিষ্ট গঠন যুক্ত অঞ্চলে বিভিন্ন প্রকার বাহ্যিক প্রক্রিয়ার (নদী, হিমবাহ, বায়ুপ্রবাহ প্রভৃতি)মাধ্যমে ধীরে ধীরে ধারাবাহিকভাবে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে ওই স্থানের ভূমিরূপ গঠনে সাহায্য করে ।এইভাবে ক্ষয় কার্যের ফলে একসময় কোন স্থানের উন্নত বা উঁচু ভূমিরূপ ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে সমুদ্রতলের নিকটবর্তী একটি সমপ্রায় ভূমি সৃষ্টি করে এবং পুনরায় ভূ আলোড়নের ফলে ভূমিভাগ উত্থিত হয় ও সেখানে আবার ক্ষয়চক্র শুরু হয়ে যায় এইভাবে চক্রাকারে ভূমি ভাগের বিবর্তনকে ডেভিস ক্ষয়চক্র বা cycle of erosion বলে অভিহিত করেছেন ।

এই বিখ্যাত আমেরিকান ভূবিদ উইলিয়াম মরিস ডেভিসের এর মতে a landscape has a define life history during which it shows gradual changes, whereby the initial forms pass through a series of sequential form to an ultimate form.

অর্থাৎ যেকোনো ভূমিভাগের একটি সুনির্দিষ্ট জীবন ইতিহাস আছে এবং জীবনকালের মধ্যে ক্রমিক পর্যায়ে ভূমিচিত্রটির  নিয়মিত পরিবর্তনগুলো প্রকাশ পায় ফলে বিচিত্র প্রাচীন অবস্থা থেকে পর্যায়ক্রমে শেষ পরিণতিতে পৌঁছায় ।


ডেভিস এর মতে গঠন, পর্যায় ও প্রক্রিয়া এই তিনের ফলশ্রুতি ভূমিচিত্র বা ভূমিরূপ ।

Landscape is function of structure,process and stage . 

Davis গঠন ( structure ) বলতে শিলার কাঠিন্য (hardness),প্রবেশ্যতা (provity),নতি (dip), ভাঁজ( fold) শিলালক্ষণকে  (lithology) বুঝিয়েছেন প্রক্রিয়া(process) বলতে আবহবিকার পুঞ্জিত ক্ষয় (mass wasting ) নদী, বায়ু, হিমবাহ, সমুদ্রতরঙ্গ প্রভৃতি প্রাকৃতিক শক্তিগুলিকে বলেছেন যারা ভূপৃষ্ঠের উপর ক্রিয়াশীল রয়েছে ।সর্বশেষে কত সময় ধরে উপযুক্ত প্রাকৃতিক শক্তি গুলি করছে তাকে তিনি পর্যায়ে বলেছেন সাধারণভাবে এ তিনটি মূল উপাদান ভূমিরূপ এর উৎপত্তি ও গঠন সম্পূর্ণরূপে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।

ক্ষয় কার্যের প্রক্রিয়ার বিভিন্নতা অনুযায়ী ভূমিরূপের বিবর্তনের ধারা বিভিন্ন প্রকার হয়। তার আদর্শ ক্ষয়চক্রের ভিত্তি হলো নাতিশীতোষ্ণ ক্রান্তীয় অঞ্চলের কার্যাবলী অর্থাৎ এই দুটি জলবায়ু অঞ্চলে ক্ষয়চক্র তার এই বিবর্তন কে ভালোভাবে চালিয়ে নিয়ে যেতে পারে। এই অঞ্চলের নদী বা জলধারার দ্বারা ক্ষয়কার্যের ফলে যে ক্ষয়ের ধারা নির্দিষ্ট হয় তাকে স্বাভাবিক ক্ষয়চক্র বলে।

ডেভিসের স্বাভাবিক ক্ষয়চক্রের গতি প্রকৃতি পর্যালোচনা করলে পরিষ্কারভাবে বোঝা যাবে যে সংশ্লিষ্ট ভূমি তার ক্ষয়চক্র প্রক্রিয়ার মধ্যে কয়েকটি সুনির্দিষ্ট পর্যায় অতিক্রম করে ।

পৃথিবীর উপরিভাগে পরিবর্তনের কাজ আদি অন্তহীন ভাবে চলতে থাকলেও তার মধ্যে বিভিন্ন পর্যায়ের চিত্র সুস্পষ্ট থাকে।

 ক্ষয়চক্রের এই বিষয়টি বোঝানোর উদ্দেশ্যে ডেভিস নিম্নলিখিত তিনটি সুনির্দিষ্ট পর্যায়ের উল্লেখ করেন ।

এই পর্যায়ে গুলি হল


যৌবন অবস্থা :

ভূমি ভাগের উপর ক্ষয়চক্র যে অবস্থার সৃষ্টি হয় সেই মুহূর্ত থেকে ভূভাগের যৌবন অবস্থা সূচনা ঘটে তিনি তার মডেলে বলেছেন ভূ-উত্থান কালে বিশেষ ক্ষয়কার্য থাকবে না এবং

ক্ষয়প্রক্রিয়া একটি সুস্থিত ভুমিরুপ এর উপর কাজ করবে প্রাথমিক অবস্থায় বৃষ্টির ফলে প্রাকৃতিক ঢাল অনুসারে দিয়ে প্রবাহিত হয়ে অনুগামী নদী সৃষ্টি করবে এই অনুগামী নদী থেকে বহু সংখ্যক উপনদীর সৃষ্টি হয় ও এরা প্রসারিত হতে থাকে এই পর্যায়ে ভূমির বন্ধুরতা যথেষ্ট বৃদ্ধি পায় ।নদী গুলি দ্রুত ক্ষয়সাধন করে এবং নদী উপত্যকা, সংকীর্ণ ও গভীর গিরিখাতের সৃষ্টি করে ।এই অবস্থায় নদীতে জলপ্রপাত দেখতে পাওয়া যায় এবং নদী তলদেশে মন্থকূপ এর  সৃষ্টি হয় ।

দুটি অনুগামী নদীর মধ্যবর্তী ভূভাগ প্রথমে প্রশস্ত ও চ্যাপ্টা শৈলশিরা রূপে অবস্থান করে এবং পরে  ক্ষয় কার্যের দরুন জলবিভাজিকাটি সংকুচিত ক্ষয় প্রাপ্ত হয়। এই অবস্থায় ভূমির বন্ধুরাতা সর্বাধিক হয় এবং ভূমিরূপ পরিণত অবস্থার দিকে অগ্রসর হয়।


পরিণত অবস্থা :

ক্ষয়চক্রের ফলে ভু উত্থানের সময়কার চিহ্নসমূহ যখন একেবারে লোপ পায় তখন পরিণত অবস্থায় সূচনা ঘটে যৌবন অবস্থায় ভূমিরূপ বন্ধুরা তা যেরূপ বর্ধিত হয় পরিণত অবস্থায় ভূমির বন্ধুরা তা  সেইরূপ কমতে থাকে এই অবস্থায় নদীর মধ্যবর্তী জলবিভাজিকা গুলির নিচু হয়ে যায় এবং জলপ্রপাত গুলি অদৃশ্য হয়ে যায় এবং নদীগুলি এঁকেবেঁকে

প্রবাহিত হয় । নদী দ্বারা  প্লাবন ভূমির সৃষ্টি হয় । প্লাবন সমভূমি স্বাভাবিক বাঁধ
সৃষ্টিতে সাহায্য করে থাকে এই পর্যায়ে অল্প ঢাল বিশিষ্ট সমগ্র ভূমি  ভাগ  ক্ষয়প্রাপ্ত শিলা চূর্ণ দ্বারা আবৃত থাকে এবং এরপর থেকে ভূমিরূপ বার্ধক্য অবস্থার দিকে অগ্রসর হয়।


বার্ধক্য অবস্থা:

দীর্ঘদিন ধরে ক্ষয় কার্যের ফলে ভূমিরূপ নিচু ও সমতল হতে থাকে অবশেষে বাধ্যক্য অবস্থায় নদীর ক্ষয়কার্য বন্ধ হয়ে যায় এবং বহন কার্য বহুলাংশে কমতে থাকে কারণ নদীর বক্ষের গভীরতা পরিণত অবস্থা শেষভাগে বহু নিম্নে পৌঁছায় এবং সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে উপত্যাকার উচ্চতা খুব অল্প থাকে এই পর্যায়ে নদীর শক্তি হ্রাস পায় এবং উপত্যাকা পাশের ঢাল কমে যায়। প্লাবন সমভূমির উপর দিয়ে নদী গুলির ধীরগতিতে গতিপথ পরিবর্তন করে চলতে থাকে ।

নদীর বাঁক ক্রমশ ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে মূলনদী থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদের সৃষ্টি করে

এবং সমগ্র ভূমিভাগএকটি সমপ্রায় ভূমি( peneplain)
এবং তার মাঝে মাঝে কঠিন শিলাময় পাহাড় দেখা যায় ।এই পাহাড়গুলি ক্ষয়কার্য প্রতিরোধ  করে অবশিষ্টাংশ রূপে অবস্থান করে ।

এই পাহাড়্গুলি কে  মোনাডনক বলে।

একটি ক্ষয়চক্র শেষ করতে অনেক সময় লাগে


অনেকক্ষেত্রে এটি সম্পূর্ণ হতে পারে না কারণ ক্ষয়চক্রের শেষ অবস্থায় বহু ক্ষেত্রে ভূমির উন্নয়ন ঘটে। একে ভূমির পুনযৌবন বলে ।

সমালোচনা : যদিও ডেভিস এই ভূমিরূপ পর্যালোচনায় গভীর এক নতুন দিগন্তের সৃষ্টি করেছিল তবুও কয়েকজন ভূতত্ত্ববিদ এই শতকের দ্বিতীয় ভাগে ডেভিসের আলোচনা সমালোচনা করেন

1) ডেভিসের আলোচনা অনুযায়ী একটি স্বাভাবিক ক্ষয়চক্রের শেষ হয় সমপ্রায় ভূমিতে এর জন্য যে বিশাল পরিমাণ সময়ের প্রয়োজন সেই সময়ের মধ্যেই বিভিন্ন কারণে নদীর পুনর্যৌবন লাভ ঘটবেই সুতরাং কোনদিন শেষ হবে না

2) ডেভিস বলেছেন সমুদ্র তলদেশ থেকে একটি নতুন ভূমি ভাব সম্পূর্ণ উন্নতি হওয়ার পর ক্ষয়কার্য শুরু হয় ক্রিমে পত্রল নতুন বিভাগ উত্থান ও ক্ষয়কার্য একই সঙ্গে চলতে থাকে বিজ্ঞানীগণ একে অসম বিকাশ তত্ত্বের আখ্যা দিয়েছেন।

3) ডেভিসের ক্ষয়চক্রের ভূমি ভাগের উপর গাছপালা মৃত্তিকা ও জীবজগতের কোন প্রভাবের উল্লেখ করেননি।

4) ডেভিস সময়ের উপরে যতটা গুরুত্ব আরোপ করেছেন শিলার গঠন ও প্রক্রিয়ার ওপর ততটা প্রাধান্য দেননি।

5) বর্তমান পৃথিবীতে ডেভিসের মতানুযায়ী সমপ্রায় ভূমি কোন উল্লেখযোগ্য উদাহরণ নেই।

6) ডেভিস বলেছেন শৈলশিরা গুলি উচ্চতা নিম্নমুখী ক্ষয়ের ফলে হ্রাস পায় কিন্তু Penck এর ভাষা অনুযায়ী শৈলশিরা গুলোর উচ্চতা পশ্চাৎ দেশীয় ক্ষয়ের ফলে কমে।


উপযুক্ত কারণে ডেভিসের স্বাভাবিক ক্ষয়চক্র সমালোচিত হলেও এটা ঠিক যে এই মতবাদ নতুন  তথ্যের যোগান দিয়েছিল সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই।


এখান থেকে আমাদের নিম্নলিখিত এই প্রশ্নগুলির উত্তর তৈরী করতে হবে।

  1. ক্ষয়চক্র কাকে বলে ?

  2. ক্ষয়চক্রের প্রক্রিয়াগুলির নাম লেখ ।

  3. ডেভিসের ক্ষয়চক্র কোন কোন জলবায়ুতে কাজ করতে পারে?

  4. সমপ্রায় ভূমি কাকে বলে?

  5. ভূমির পুনর্যৌবন কাকে বলে?

  6. মোনাডনক কি?

  7. ডেভিসের ক্ষয়চক্রের মতামতটি বিপক্ষে কি কি যুক্তি আছে?

  8. অনুগামী নদী কাকে বলে?

  9. জলপ্রপাত কিভাবে সৃষ্টি হয় ?

  10. আঁকাবাঁকা নদী উপত্যকা ক্ষয়চক্রের কোন পর্যায়ে সৃষ্টি হয়?

  11.  জলবিভাজিকা বলতে কী বোঝো?

  12. সংকীর্ণ ও গভীর উপত্যাকা ক্ষয়চক্রের কোন পর্যায়ে সৃষ্টি হয়?


শিক্ষক দিবস

শিক্ষক দিবস Teacher's Day আজকে শিক্ষক দিবস। আজকেই আমাদের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণানের জন্মদিন। রাষ্ট্রপতি হলেও তিনি একজন ...