সখা মায়া কারে কয় ?
সে কি কেবলই মিথ্যে ভয়।
আচ্ছা আমাদের মায়া কত রকমের হতে পারে?
এই পৃথিবীতে সবই মায়া। আমি যে লিখছি এটাও মায়া। আর আমরা কেবল এর নিমিত্ত মাত্র !
সমগ্র বিশ্বব্রহ্মাণ্ডই মায়া।
তবে ইদানিং কালে এই মায়া খুবই মায়ায়িত করে চলেছে। আবার তা যদি হয় এই ২১ দিনের লকডাউন।
অনেকেই হয়তো বলবেন আবার কুমিরের গল্প।
দেখুন এই ২১ দিনে কিছু মানুষ সত্যিই মায়ায়িত হয়েছে।
যেমন আলু পটলের মায়া ।
কচি লাউ আর চিংড়ির মায়া।
বাজার থেকে কেনা জ্যান্ত মাছের মায়া।
মেয়ের বাড়িতে সজনে ডাটা পাঠানোর মায়া।
সকাল সন্ধ্যে চা খাওয়ার মায়া ।
সন্ধ্যেবেলায় বাবলুর বাংলার মায়া।
চ্যাটাই পেতে তাস খেলার মায়া।
কিছু সমাজসেবা করেই সেলফি তোলার মায়া।
ব্যাংকে পাসবুক আপডেট করার মায়া।
একাউন্টে সরকার থেকে পাঠানো ৫০০ টাকার মায়া।
সবশেষে ,করোনার অনুভূতি পাওয়ার মায়া( জার্মানির স্বাস্থ্যমন্ত্রী)
তবে আজকে আমি একঘেয়েমী মোদী ও মমতার ঘোষণা সম্পর্কে কিছু বলবো না।
কারণ এরা পূজনীয় ব্যক্তিত্ব। এদের উপরে তোলা থাক।
এই সম্পকীত লেখাটি আমার কমেন্টস সেকশনে রয়েছে পারলে একবার পড়ে নেবেন।
আলু পটল টাটকা মাছের কথাও আজ বরং থাক ।এ নিয়ে বিস্তর লেখালেখি হয়েছে তারথেকে ফেকু ছোড়াছুড়ি হয়েছে আরও বেশি।
আজকে ৮ ই এপ্রিল। আজ সকাল বেলায় যখন আমি লিখতে বসেছি তখন ভারতে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা পাঁচ হাজার ছাড়িয়েছে। সারাবিশ্বে ১৫ লক্ষ। ভারতের মৃতের সংখ্যা এখন পর্যন্ত ১৭০ । আর সারা বিশ্বে ৮৪ হাজার। জানি এর থেকে ঘন ঘন আপডেট আপনি পাচ্ছেন। সংখ্যার কমবেশি থাকতে পারে। যদি গড় হিসাব ধরি ভারতবর্ষে প্রতিদিন গড় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা সাড়ে ৪৫০। আর মাত্র ৮ দিন লকডাউন বাকি । লকডাউনের ২১ তম দিনে এই সংখ্যাটা পৌঁছাবে ১০০০০ বা তার থেকে আরও বেশি। আমার প্রিয় ভারতবর্ষ সারাবিশ্ব থেকে কিন্তু আলাদা নয় । সারা বিশ্বে যেভাবে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে তার মধ্যে যে কোন একটি দেশকে যদি আপনি মডেল হিসেবে ধরেন তাহলে আপনি বুঝতে পারবেন আমাদের আরো কতোটা সচেতন হওয়া দরকার। যদি আপনি আমেরিকাকে মডেল হিসেবে ধরেন তাহলে এপ্রিল মাসের শেষে এই সংখ্যাটা আমাদের দাঁড়াবে ৫ লাখ।
আর যদি ফ্রান্স-জার্মানিকে মডেল হিসাবে মনে করেন তাহলে সংখ্যাটা দাঁড়াবে ১২৫০০০। এই সংখ্যাগুলো যদি শতাংশ হিসেবে ভাবেন তাহলে কোথাও ২০০০ শতাংশ আবার কোথাও ৮০০০ শতাংশ।
এই দেশগুলোকে মডেল করবেন নাকি মডেল হিসাবে অনুসরণ করবেন এশিয়ারই আর একটি দেশ দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে। তাদের বৃদ্ধির হার মাত্র ১৩০ শতাংশ। এটা তখনই সম্ভব যখন আপনি সচেতন হবেন।
আর এই সচেতনতার একমাত্র পরীক্ষা সোশ্যাল ডিসটান্সিং এবং ফলাফলও সোশ্যাল ডিসটান্সিং।
আর এর জন্য কোন পয়সা লাগে না, লাগে না কোন ওষুধ।
তবু আমাদের মায়া কিছুতেই কাটছে না!
আমি যখন বাড়ি থেকে বের হয় তখন আমার বউয়ের দুটি চোখ ছল ছল করে ওঠে। মা তার ইষ্ট দেবতাকে স্মরণ করে যাতে আমার শরীরের করোনার নজর না পরে। আমার পাঁচ বছরের ছোট্ট ছেলেটা হাত টেনে ধরে বলে বাবা আজ তুমি যেওনা।
কারণ এই পরিস্থিতিতে আমিও একনিষ্ঠ সৈনিক। তবে সেটা ফুটবলের গোলকিপারের মত।
আমাকে প্রতিদিনই বাড়ি থেকে বের হতে হয়। মিশতে হয় কমপক্ষে ১০০ থেকে ২০০ মানুষের সঙ্গে।
প্রতিদিন আমার বন্ধুরা আমার সহকর্মীরা ফোন করে জিজ্ঞেস করে কিরে ঠিক আছিস তো?
সবকিছু মেইনটেন্স করছিস তো?
থাক নিজের কথা।
আর মাত্র ১৫ দিন ।তার পরে হয়তো অনেক কিছুই পাল্টে যাবে। অনেক হিসাব কিতাব, মায়া মমতা।
রাস্তাঘাট থাকবে। থাকবে বাড়ি ঘর। ব্যাংক, অফিস, স্কুল, হসপিটাল সবই থাকবে আগের মতই । শুধু থাকবে না কিছু মানুষ যারা খুব প্রিয়।
এবার হয়তো আপনার চোখের কোনায় একটুকু জল ছল ছল করছে! নাকি ভয় করছে ? সামলে নিন ।
ভরসা রাখুন, সোশ্যাল ডিস্ট্যান্সিং মেনে চলুন। ঘরে থাকুন।
এবার কিছু আশার কথা বলি।
ভারতে এখনো পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ৪৭৪ জন রোগী এবং সুস্থ হওয়ার পথে আরও হাজার খানেক । বেশিরভাগ মানুষই সুস্থ হবেন। সুস্থ হবে আমাদের পৃথিবীও।
লেখা শেষ করার আগে আরও কয়েকটি মজার কথা শোনায় ।
এই করোনার আবির্ভাবে কিছু মানুষ বেশ কিছু জিনিস শিখেছে। যেমন কিভাবে নিজেকে পরিষ্কার রাখতে হয়। হাত কিভাবে কুড়ি সেকেন্ড ধরে কচলে কচলে ধুতে হয়। হাঁচলে কাষলে হাতের বদলের হাতের কনুই দিয়ে কিভাবে তাকে ম্যানেজ করতে হয়। মুখে মাস্ক ও বাড়িতে তা তৈরি করার পদ্ধতি।
এছাড়া কিছু ভাষা যেমন স্যানিটাইজার ,হ্যান্ডওয়াশ , হাইড্রক্সি ক্লোরোকুইন ,আইসোলেশন কোয়ারেন্টাইন।
বাড়িতে কেউ আসলে মিষ্টি করে তাকে বলে দেওয়া
বাড়ির ভিতরে ঢুকবেন না একটু দূর থেকে কথা বলুন ,
জানেন তো চারিদিকে কি ঘটছে!
আর যেটা এক্কেবারে পেটেন্ট পেয়ে গেল সেটা হলো সোশ্যাল ডিস্ট্যান্সিং।
যেটা ডিজিটাল ইন্ডিয়ায় ফলাফল হিসাবে আগে থেকেই পটভূমি তৈরি ছিল।
এবং অবশ্যই যে গানটি হিট করে গেল সেটি হল
হেমন্ত মুখার্জীর--
তারে বলে দিও সে যেন আসে না
আমার ঘরে তারে বলে দিও।
No comments:
Post a Comment