Wednesday, May 20, 2020

করোনা ও আপনি

করোনা ও আপনি

আমার ভারতবর্ষ আজ অতি গণতান্ত্রিক আর এই অতি গণতান্ত্রিক ভারতবর্ষে কিছু মানুষ না মানবো না এই চিন্তা ভাবনার ভাবনায় নিজেকে অলংকৃত করার চেষ্টা করেন যাতে গায়ে একটা বেশ বুদ্ধিজীবী বুদ্ধিজীবী গন্ধ বের হয়।
বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় একটা রাষ্ট্রবিরোধী বা দেশের প্রধানের বিরোধী কোন বক্তব্য ছবি ভিডিও পোস্ট না করলে ভাবেন আমিও বোধহয় জয় গোস্বামী অথবা অপর্ণা সেন দের সমগোত্রীয় হলাম না । আবার কিছু মানুষের মধ্যে আইন ভাঙার প্রবণতা রয়েছে বা তৈরি হচ্ছে তার উপর শাখের করাত  ভারতের প্রধানমন্ত্রী বিশেষ একটি রাজনৈতিক দলের। যাকে অনেকে ধর্মের শত্রু বলে ভাবতে শুরু করেছেন।
আমার এই লেখা পড়ার পর আমি জানি অনেকেই বিভিন্ন কমেন্ট করবেন এতে আমার বাবা মা বা পূর্বপুরুষরা উদ্ধার না হলেও আমার সাম্প্রদায়িক বা রাজনৈতিক রং চেনার চেষ্টা করবেন সে বিষয়ে আমার কোন সন্দেহ নেই।আর এতে আমার কিছু যায় আসে না ।
ভূমিকাটা বড্ড বেশি করে ফেললাম এবার আসি মূল কথায়। আজকে আমার লেখার মূখ‍্য উদ্দেশ্য 21 দিনের লকডাউন ,কেন্দ্র ও রাজ্য প্রশাসনের নির্ধারিত নীতি ও প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য। প্রথমেই আসি 21 দিনের লকডাউন এর প্রসঙ্গে।
প্রশ্নটা হল 21 দিনের লকডাউন আমরা কি মানছি ? নাকি সুন্দর পাজামা-পাঞ্জাবী পরে প্রতিদিন বাজার করতে বেরোচ্ছি ভাবটা এমন প্রতিদিন বাজার করব এবং টাটকা শাক-সবজি মাছ-মাংস কিনব! আবার দেখুন মাংসের দোকানে 700 টাকা কেজি হলেও তা কিন্তু পড়ে থাকছে না। কিন্তু পাশে বসে থাকা টোটো চালক ধনঞ্জয় সে কিন্তু লকডাউনে ধরা পড়েছে । কিন্তু আপনি ধরা পড়েননি তাই ইনজয় করে যাচ্ছেন।
আবার অনেকের ধারণা বাজার করলে করোনা হয় না বা আমার অন্তত করোনা হবে না । আমার শরীর স্বাস্থ্য খুবই সুগঠিত এবং আমার ভগবান অথবা আল্লাহ আমার সহায় রয়েছে। অথবা করোনা একমাত্র তাদেরই হবে যারা ধর্ম মানে না অথবা ধর্মবিদ্বেষী ।
এবার আসি প্রধানমন্ত্রী কিছু বক্তব্য সম্পর্কে। যেদিন প্রথম জনতা কার্ফু হল সেদিন প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন বিকেলবেলায় আমরা সবাই যার কাছে যা আছে ঘন্টা, থালা না থাকলে হাততালি দিয়ে করোনা সৈনিকদের  সম্মান জানাবো। কিন্তু এখানেও বিরোধিতা। বিরোধিতা কি নিয়ে? নাকি হাততালি দিয়ে করোনা কে তাড়ানো যাবে না। এই নিয়ে নানা বক্তব্য ফেসবুক হোয়াটসঅ্যাপে আমরা দেখতে পেলাম।
এবার আসি প্রধানমন্ত্রীর পরের বক্তব্য নিয়ে। কি বললেন 5 ই এপ্রিল নটায় নয় মিনিটের জন্য আমরা আলো নিভিয়ে মোমবাতি বা প্রদীপ জ্বালাবো।
দেখুন এখানেও বিরোধিতা। কারণ এই সমস্ত মানুষদের বিরোধিতা করতেই হবে এবং বিরোধিতা করার জন্যই এদের জন্ম হয়েছে ভুন্ডুল রাশিতে । মানবো না এই কারনে ।নাকি এতে ধর্মের সুড়সুড়ি রয়েছে!
আচ্ছা বলুন তো আমরা দেওয়ালিতে কি প্রদীপ জ্বালাই না ? সবেবরাতের দিনে কি আমাদের মুসলমান ভাইয়েরা বোনেরা বারান্দায় মোমবাতি জ্বালায় না।গির্জাতে খ্রিস্টান মানুষেরা মোমবাতি কি কোনদিন  জ্বালায় নি ?
নাকি আমরা ভুলে গেছি কলকাতার রাস্তায় বিদ্বজনদের মোমবাতি মিছিল ! নাকি সেখানে শুধু হেঁটেছিল কিছু বিশেষ ভাই-বোনেরা।
নির্ভয়া এর বিচার চেয়ে আমরা তো মোমবাতি জ্বালিয়েছি। মোমবাতি জ্বালিয়ে আত্মার শান্তি কামনা করেছি তাপসী মালিকের জন্যে ও।
কিন্তু আজকে এত দ্বিধা কেন ? কেন এত কুন্ঠিত বোধ করছি বাড়ির ছাদে, বারান্দায় কিংবা ব্যালকনিতে একটা প্রদীপ কিংবা মোমবাতি জ্বালাতে।
আমরা কি পারি না করোনা আক্রান্ত যে সহ নাগরিকরা আমাদের মধ্যে নেই তাঁদের আত্মার শান্তি কামনা করতে ।
আমরা কি পারিনা যেসব স্বাস্থ্য কর্মী পুলিশকর্মী, ব্যাঙ্ক কর্মী মুদিখানার দোকানদার ,বাজারের সবজি বিক্রেতা, মাছ বিক্রেতা যারা করোনার সংক্রমণের ভয় থাকা সত্বেও প্রতিদিন আমাদের এই পরিস্থিতিতে সেবা করে যাচ্ছেন।
আমরা কি এটাও পারিনা ? যে সমস্ত করোনা রোগী মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে যাচ্ছেন তাদের আর একটু ভরসা দিতে আমরা তোমাদের পাশে আছি বন্ধু !আছি তোমার পরিবারের সঙ্গে।
আসুন না আজকে যারা প্রদীপ জ্বালাতে পারলেন না । তারা একবার অন্তত প্রদীপ জ্বালায় । এর জন্য কোনো নিঘন্ট তিথি লাগে না । লাগে না কাউর অনুরোধ । অন্তত এই জন্য এই কাজটি করি যাতে সবার মধ্যে একটা ভরসার জায়গা তৈরি হয় হ্যাঁ আমরা রয়েছি সবার সঙ্গে। সবাই আমরা একটা প্রদীপ জ্বালি আর উচ্চস্বরে না গাইতে পারি অন্তত মনে মনে গুনগুন করে গাই–
কিশোর কুমারের সেই বিখ্যাত হিন্দি গান।
দ্বিয়ে জ্বলতে হে।
ফুল খিলতে হে ।
বরি মুসকিল সে ,মগর

দুনিয়া মে দোস্ত মিলতে হে ।

আর যারা প্রদীপ জ্বালাতে পারলেন না তারা অন্তত ফেসবুক হোয়াটসঅ্যাপে আর আগুন জ্বালাবেন না।
লেখা শেষ করতে করতে আরেকটা সুখবর দিই । সেটা হচ্ছে ভারতবর্ষের কোন জায়গায় গ্রিড বিপর্যয় হয়নি অর্থাৎ ব্ল্যাক আউট হওয়ার সম্ভাবনা আর নেই। শুধুমাত্র মনের মধ্যে কোন ব্ল্যাকআউট রাখবেন না। সরকার ও প্রশাসনের কথা মেনে চলুন ঘরে থাকুন।

No comments:

Post a Comment

শিক্ষক দিবস

শিক্ষক দিবস Teacher's Day আজকে শিক্ষক দিবস। আজকেই আমাদের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণানের জন্মদিন। রাষ্ট্রপতি হলেও তিনি একজন ...